দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
দালাল বাজারের জমিদার বাড়ি, সাহাপুর নীল কুঠি বাড়ি, সাহাপুর সাহেব বাড়ি, খোয়াসাগর দীঘি, ঐদারা দীঘি, কমলা সুন্দরী দীঘি, শ্রীরামপুর রাজ বাড়ি (রামগঞ্জ)
মসজিদ ও দরগাহসমূহঃ
তিতা খাঁ জামে মসজিদ, মিতা খাঁ মসজিদ, মজুপুর মটকা মসজিদ, মধুবানু মসজিদ, দায়েম শাহ মসজিদ, আবদুল্লাহপুর জামে মসজিদ, রায়পুরের কেরোয়া গ্রামের জ্বীনের মসজিদ, শ্যামপুর দায়রা শরীফ, কচুয়া দরগাহ, হরিশ্চর দরগাহ, কাঞ্চনপুর দরগাহ, বড় মসজিদ
উপসনালয়ঃ
শ্রীগোবিন্দ মহাপ্রভুর জিউ আখড়া, দালাল বাজার মঠ, রাম গতির রাণী ভবানী কামদা মঠ
লক্ষ্মীপুরের মৃৎশিল্প
বাংলার মৃৎশিল্প কুটির শিল্পেরই একটি অংশ। এক সময় এ শিল্পের জন্য বাংলাদেশের গর্ব ছিল। লক্ষ্মীপুর ভূ-খন্ডে জনবসতি স্থাপনের আদিপর্ব থেকে গৃহস্থালীর জন্য মাটির তৈরী জিনিসপত্রের চাহিদা শুরু হয়। ক্রমশঃ মৃৎ শিল্পের কারিগরগণ আসেন এবং বসতি স্থাপন করেন। ফলে এ জেলার প্রতি উপজেলায় কুমোর বাড়ি দেখা যায়। কুমোরগণ কয়েক পুরুষ থেকে হাড়ি- পাতিল, মিটকি, কলস, বদনা, বইয়াম, মুচি বাতি, আগুনের বোশি প্রভৃতি গৃহস্থালীর অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং মেলার জন্য মাটির রঙ-বেরঙের খেলনা তৈরী করেন। বাড়ির মহিলারাও মৃৎশিল্পের শ্রমিক। তারা মাটির সামগ্রী তৈরীর পাশাপাশি বিভিন্ন ডিজাইনের রঙ করতেন। মাটির সামগ্রীর মাঝে মৃৎশিল্পীদের বিভিন্ন ডিজাইনের রঙের ছোঁয়া আমাদের মনকে পুলকিত করে তোলে।
লক্ষ্মীপুরে মৃৎশিল্পের বিবরণ
লক্ষ্মীপুর সদরঃ
লক্ষ্মীপুরের পৌর এলাকার মজুপুর গ্রামের গোপীকৃষ্ণ পাল ১৯৭৩ সাল থেকে মাটির কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। মাটি দিয়ে তিনি পুতুল ও বিভিন্ন রকমের খেলনা যেমন- গরু, ঘোড়া, পাতিল, মোরগ, হাঁস, ব্যাংক, বাঘ, টিয়ে পাখি, চড়ুই পাখি, টুনটুনি পাখি, হাতি ইত্যাদি তৈরী করেন এবং এসব তিনি দোকানে ও মেলায় বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মজুপুরের পালকান্দির মৃত রমনী পাল ও তার ভাইগন পূর্ব পুরুষের ধারায় দীর্ঘকাল থেকে পারিবারিকভাবে মৃৎশিল্পের কাজ করেছেন। এখনও পালকান্দিতে মৃৎশিল্পের কাজ চলছে। উত্তর বাঞ্চানগর কুমোর বাড়ী, গঙ্গাপুর পালবাড়ি ও ধর্মপুর কুমোর বাড়ীতে শত শত বছর থেকে বংশপরম্পরায় মৃৎ সামগ্রী তৈরী হচ্ছে। ভবানীগঞ্জের ধর্মপুরে ১০/১৫ টি বাড়ীতে মৃৎ সামগ্রী তৈরী হয়। রাধাপুর গ্রামের ১টি বাড়ী ৪/৫ পরিবার, দালালবাজার খোয়াসাগর দীঘির পূর্ব পাড়ে ১টি বাড়ী ২/৩ পরিবার, মজুপুর গ্রামে ৪/৫ বাড়ী, চৌপল্লী গ্রামের ১ টি বাড়ী ৪/৫ পরিবার, হামছাদীতে ২টি বাড়ী ১০/১৫ পরিবার মৃৎ সামগ্রী তৈরী করে থাকে।
রামগঞ্জঃ
খলিফা দরজা থেকে নেমে আড়াই থেকে তিন মাইল দূরে শৈরশৈ নামক এক গ্রামে ৬ বাড়ীতে অনেক পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কুমোর বাড়ীর লোকেরা প্রতিমা, খেলনা, হাড়ি-পাতিল তৈরী ও রঙ করে হাট-বাজার, মেলা ও বাড়ী বাড়ী নিয়ে বিক্রি করেন। মৃত বোবা হেলাল নন্দী ও ছেলে নারায়ন নন্দী মাটির প্রতিমা তৈরীর কারিগর হিসেবে প্রসিদ্ধ।
রায়পুরঃ
রায়পুর বাজারের রামকৃষ্ণ পাল, অর্চনা পাল, মোহন বাঁশী পাল, মিনা পাল, শামিত্ম পাল গৃহস্থালীর সামগ্রীর সাথে ফুল, পাখি, ফল, পশু ও মুখোশ তৈরী করে পূর্ব পুরুষদের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছেন।
রামগতিঃ
রামগতির করুনানগরের চন্দ্র মোহন পাল কয়েক পুরুষ পূর্ব থেকে মৃৎশিল্পের কাজ করতেন। বর্তমানে এ পরিবার উচ্চ শিক্ষিত হয়ে অন্য পেশা বেছে নিলে মাটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মৃৎ সামগ্রী আসে, যেমন- বরিশাল, পটুয়াখালী, ঢাকার রায়ের বাজার, সাভার, টাঙ্গাইল ইত্যাদি।
প্রতিমা তৈরীর কারিগরঃ
হিন্দু সম্প্রদায় মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরী করে এবং অর্চনা করে। তাই প্রতিমা তৈরীতে মৃৎশিল্পের অবদান অনস্বীকার্য এবং যুগ যুগ ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে আসছে। লক্ষ্মীপুরে দূর্গা প্রতিমার কিছু কারিগর আসে ধর্মপুর থেকে আর বাকী সব কারিগর আসে ফরিদপুর জেলা থেকে। লক্ষ্মী, স্বরস্বতী প্রতিমা তৈরীর কারিগর আসে ধর্মপুর, হামছাদী ও রামগঞ্জ থেকে।
ব্যবহৃত মাটির উৎসঃ
এ মাটির কিছু অংশ আসে রামগঞ্জ থেকে। বাকী সব মাটি নোয়াখালী জেলার জমিদার হাট সংলগ্ন পপুলার বিস্কুট ফ্যাক্টরীর সামনের জমি থেকে কিনে আনা হয়। কারণ এ অঞ্চলে এ মাটি পাওয়া যায় না, এর জন্য প্রয়োজন আঠালো মাটি যা কুমারিরা মাটি নামে পরিচিত। এখানকার মাটি সাধারণত বেলে মাটি।
মৃৎ শিল্পের তথ্য চিত্রঃ
মূলধন (মাসিক) |
শ্রমিক |
মাসিক বিক্রি |
১২-১৫ হাজার টাকা |
৪/৫/৬ জন |
নিম্নে ৮/১০ হাজার টাকা |
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস